‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ প্রসঙ্গে বাণী
আজ ১২ নভেম্বর। এই দিনে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ রহিত করে দেশের বুকে বিচারহীনতার যে ঘৃণ্য সংস্কৃতি চালু হয়েছিল, তার অবসান ঘটেছে। তাই ১২ নভেম্বর দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ১৯৯৬ সালের মহান জাতীয় সংসদে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ রহিত করে ইতিহাসের কলঙ্কময় ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়ার পথ উন্মুক্ত হয়। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কুশীলব চক্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুনের দায় থেকে রক্ষা করার জন্য ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ নামের মানবতাবিরোধী ও কালো আইন প্রণয়ন করেছিল। যা ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার গঠনের পর ওই বছরই ১২ নভেম্বর সপ্তম জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার পথ সুগম করে দেন।
আমরা জানি, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারকে হত্যা করে ইতিহাসের কলঙ্কিত বর্বরোচিত অধ্যায় রচিত হয়- যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। এরপর খুনিচক্র কেবল ব্যক্তি মুজিবকেই হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি, তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তির উপর আঘাত হানে। জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। তার ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ‘জেল হত্যাকাণ্ড’ ঘটে। এরপর দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে জাতির পিতার খুনিদের ফাঁসির রায় ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি ইতিহাসের প্রতি তার দায় শোধ করতে শুরু করে। পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করে বাঙালি জাতিকে কলঙ্ক ও দায়মুক্ত করেছেন। এই আইন বাতিল হওয়ার ফলে খুনিদের বিচারকার্য সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে এবং এজন্যই আজকের এই দিনটি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার উজ্জ্বলতম ও গৌরবময় দিন।
আমি মনে করি, ইতিহাসের এই কলঙ্কময় অধ্যায় থেকে বাঙালি জাতিকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করতে হলে পলাতক বাকী খুনিদের ফাঁসি কার্যকর করাসহ এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচিত করতে হবে। এই স্বাধীনতাবিরোধী কুশীলবদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে। এছাড়া তিনি বর্বর খুনি ও এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কুশীলবদের শুধু বিচার করে নয়; বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন সকলকে লালন করে সোনার বাংলা গড়ে তোলার মাধ্যমে উন্নত জাতি গঠন করে নৈতিকভাবে দায়মুক্ত হওয়ার আহবান জানাই।