ডুয়েটে দুইদিন ব্যাপী ‘সাসটেইনেবল ইঞ্জিনিয়ারিং ডেভেলপমেন্ট (আইসিএসইডি-২০২৩)’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সম্পন্ন
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর-এর দুইদিন ব্যাপী ‘সাসটেইনেবল ইঞ্জিনিয়ারিং ডেভেলপমেন্ট (আইসিএসইডি-২০২৩)’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় (১৪ জুন, ২০২৩ খ্রি.) ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত এ কনফারেন্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ডা. দিপু মনি, এমপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমান যুগ টেকসই উন্নয়নের যুগ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশ ও দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের আমলে দেশের অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল খাতে টেকসই উন্নয়নকে বিবেচনায় নিয়ে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান উন্নয়নের মাধ্যমে একটি আধুনিক, সমৃদ্ধ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে যাচ্ছেন। কেননা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ছাড়া একটি জাতি কখনোই উন্নতি লাভ করতে পারে না। তাই এ ধরনের কনফারেন্স আয়োজন বর্তমান সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অপরদিকে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তথ্য ও প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমরা নিজেদেরকে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুত করছি।
তিনি আরো বলেন, এমন উপযুক্ত সময়ে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং, এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়নমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে এই ধরনের আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজনের জন্য ডুয়েটকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আমি মনে করি, এই ধরনের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ও কোলাবোরেশান তৈরি হচ্ছে। যা টেকসই উন্নয়ননের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদেরকে আরো দক্ষ হয়ে উঠতে সহায়তা করবে। আমি বিশ্বাস করি, এই কনফারেন্স থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান আমাদের দেশ ও জাতি গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
ডুয়েটের অধিকতর উন্নয়ন (১ম সংশোধনী) প্রকল্পের আয়োজনে কনফারেন্সের সমাপনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা চতুর্থ শিল্প বিল্পবের যুগে আছি, যা বিশেষ করে প্রকৌশল শিক্ষাবিদদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। চতুর্থ শিল্প বিল্পবের প্রভাবে প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে পরিবর্তনও খুব দ্রুত গতিতে ঘটছে। তাই একমুখী গবেষণার পরিবর্তে সমন্বিত এবং বহুমাত্রিক বিষয়ে গবেষণাসমূহকে প্রাধ্যান্য দিয়ে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে হবে এবং এই দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিগুলির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিষয়ে জ্ঞান আরোহণের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আপনারা সকলেই জানেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে আমাদের বর্তমান সরকার বহুমাত্রিক গবেষণার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তি সমৃদ্ধ যে সোনার বাংলা গড়ার পথ দেখিয়েছিলেন, সে পথ ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। সুতরাং একটি টেকসই সমাজ গঠনের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির পাশাপাশি কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং, এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়নমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভ‚মিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করি, ‘সাসটেইনেবল ইঞ্জিনিয়ারিং ডেভেলপমেন্ট (আইসিএসইডি-২০২৩)’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের থেকে নতুন নতুন গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং জ্ঞান বিনিময়ের প্লাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এবং রূপকল্প ২০৪১ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন এগিয়ে যাওয়ার কার্যকরী ভ‚মিকা এবং একাডেমিয়া, শিল্প উদ্যোক্তা, নীতি-নির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
এ সময় তিনি গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও তাঁদের পরিবারের শাহাদাত বরণকারী সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাসহ জাতীয় চার নেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি ১৯৫২ সালের সকল ভাষা শহীদ, মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং দুই লক্ষ নির্যাতিত নারীসহ মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপু মনি, এমপিকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে তাঁর সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও কল্যাণ কামনা করেন। এছাড়া তিনি আয়োজক কমিটি, প্রতিনিধি, মূল বক্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এবং দেশ-বিদেশের অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রশীদ বলেন, টেকসই উন্নয়ন বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী একটি আলোচিত বিষয়। মানব জাতির টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির সকল সম্ভাবনাগুলো প্রয়োগের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের অনুশীলন করতে তিনি সকলকে আহবান জানান। তিনি বলেন, আমি মনে করি, এ কনফারেন্সে উত্থাপিত চিন্তা ভাবনাগুলো প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, টেকসই উন্নয়ন ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, গবেষক, নীতি-নির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে মতবিনিময় ও কর্মপন্থা নির্ধারনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ডুয়েটের অধিকতর উন্নয়ন (১ম সংশোধনী) শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও কনফারেন্স চেয়ার অধ্যাপক ড. মো. শওকত ওসমান। সমাপনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত বেস্ট পেপার প্রেজেন্টারদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল ডুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি এবং ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট। পাবলিকেশন পার্টনার হিসেবে ছিল ডুয়েট জার্নাল, এনার্জি অ্যান্ড থার্মোফ্লুইডস্ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং জার্নাল অব রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যান্ড টেকনোলজি। কনফারেন্স পার্টনার হিসেবে ছিল ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অমিত সূত্রধর ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মাহবুবা জান্নাত। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডীন, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ দেশ-বিদেশের শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য যে, দুইদিন ব্যাপী এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে বিভিন্ন বিষয়ে ৫০ টিরও বেশি টেকনিক্যাল পেপার, কী-নোট স্পিচ, ইনভাইটেড স্পিচ ইত্যাদি বিষয় উপস্থাপিত হয়। বিশ্বব্যাপী টেকসই প্রকৌশল উন্নয়ন বিষয়ে সাম্প্রতিক উদ্ভাবন ও গবেষণা নিয়ে শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, গবেষক ও নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে মতবিনিময় এবং কর্মপন্থা নির্ধারণই এ কনফারেন্সের উদ্দেশ্য ছিল।