ডুয়েটে দুইদিন ব্যাপী ‘নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিং, আইওটি অ্যান্ড মেশিন লার্নিং (এনসিআইএম ২০২৩)’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের শুরু
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর-এ আজ শুক্রবার (১৬ জুন, ২০২৩ খ্রি.) দুইদিন ব্যাপী ‘নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিং, আইওটি অ্যান্ড মেশিন লার্নিং (এনসিআইএম ২০২৩)’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স শুরু হয়েছে। ডুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ-এর (সিএসই) আয়োজনে ‘রূপকল্প ২০৪১’ অর্জনের লক্ষ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার্থী, গবেষক এবং শিক্ষাবিদদের মানসম্পন্ন গবেষণা সম্পাদনে সহায়তা ও উৎসাহিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আহ্সান উল্লাহ মাস্টার অডিটোরিয়ামে সকালে এ কনফারেন্সের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক, এমপি।
এ সময় তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই মাহেন্দ্রক্ষণে ডুয়েটের এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্স থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও সুপারিশগুলো আমাদের দেশ ও জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও অবদান রাখবে বলে মনে করি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তথ্য-প্রযুক্তির উন্নতি ছাড়া এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর আর্দশ ও দর্শন ধারণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বপ্নের সোনার বাংলা ও রূপকল্প ২০৪১ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আমি মনে করি, স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথ আরো গতিশীল করতে এই কনফারেন্সের ভূমিকা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি কনফারেন্সের সফলতা কামনা করে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. হাবিবুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় বাঙালি জাতিকে বিজ্ঞানমনষ্ক ও শিক্ষিত করে তোলার প্রচেষ্টা করেছেন। তাঁর আদর্শকে ধারণ করে বর্তমান সরকার তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সকল কার্যক্রম পরিচালনার ধারা অব্যাহত রেখেছে। এতে কর্মক্ষেত্রে নানা অসুবিধাগুলো দূর হয়ে সময়, শ্রম লাঘব হচ্ছে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় শিল্প বিপ্লবে যে সকল প্রতিবন্ধকতা ছিল তা কাটিয়ে উঠে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে ডিজিটাল সক্ষমতা সৃষ্টি ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের সুবিধা তৈরি হওয়ায় বৈশ্বিক পরিমন্ডলে নিজেদের দক্ষতা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে মানবজাতির জীবনযাপন, কাজ এবং একে অপরের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা নতুন নতুন মাত্রা দেখতে পাচ্ছি। আগামী কয়েক বছর অর্থনীতি এবং শিল্পসহ সকলক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। এ প্রভাব মোকাবেলায় ‘নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিং, আইওটি অ্যান্ড মেশিন লার্নিং’ বিষয়টি খুব তাৎপর্যপূর্ণ। তবে সমাজ যেন অনুভূতিহীন হয়ে না পড়ে, সে দিকটা খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ মানবিক অনুভূতির বিষয়টিকে সব সময় প্রাধ্যন্য দিয়ে মানব কল্যাণমুখী উদ্ভাবন ও গবেষণায় মনোনিবেশ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এ ধরণের আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে নতুন নতুন গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং জ্ঞান বিনিময়ের প্লাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এবং রূপকল্প ২০৪১ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন এগিয়ে যাওয়ার কার্যকরী ভ‚মিকা এবং একাডেমিয়া, শিল্প উদ্যোক্তা, নীতি-নির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। তিনি আরো বলেন, আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক বিশিষ্ট আমন্ত্রিত বক্তা এবং গবেষকদের উপস্থাপনা এবং আলোচনা স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এ সময় তিনি গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও তাঁদের পরিবারের শাহাদাত বরণকারী সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাসহ জাতীয় চার নেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি ১৯৫২ সালের সকল ভাষা শহীদ, মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং দুই লক্ষ নির্যাতিত নারীসহ মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক, এমপিকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে তাঁর সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও কল্যাণ কামনা করেন। এছাড়া তিনি আয়োজক কমিটি, প্রতিনিধি, মূল বক্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এবং দেশ-বিদেশের অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রশীদ বলেন, কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি আমাদের জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে এবং আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলেছে। আমি মনে করি, উন্নত দেশ গড়ার ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির সমন্বয় সাধন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এ কনফারেন্সে উত্থাপিত চিন্তা ভাবনাগুলো শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, গবেষক, নীতি-নির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে মতবিনিময় ও কর্মপন্থা নির্ণয়ে এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেটওর্য়াক তৈরিসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ।
সিএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও কনফারেন্সটির জেনারেল চেয়ার অধ্যাপক ড. মো. ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কী-নোট স্পীকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম। আরো বক্তব্য দেন সেশন চেয়ার ‘আই-ইইই কম্পিউটার সোসাইটি বাংলাদেশ চ্যাপ্টার-এর চেয়ার অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আরেফিন ও অরগানাইজিং সেক্রেটারি ও সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন কনফারেন্সের অরগানাইজিং চেয়ার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল কাশেম, অরগানাইজিং কো-চেয়ার ও সেশন কো-চেয়ার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রউফ, টেকনিক্যাল প্রোগ্রাম কমিটি চেয়ার অধ্যাপক ড. ফজলুল হাসান সিদ্দিকী। এ সময় ‘আই-ইইই’ পক্ষ থেকে ভিডিও বার্তা দেন ‘আই-ইইই’ চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. সাইফুর রহমান।
এ আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘর এবং এটুআই (ধ২র)। টেকনিক্যাল কো-স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ‘আই-ইইই’ ও ‘আই-ইইই কম্পিউটার সোসাইটি’ এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট হিসেবে থাকছে ‘আই-ইইই কম্পিউটার সোসাইটি বাংলাদেশ চ্যাপ্টার’। এছাড়াও ইলেকট্রনিক মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ‘চ্যানেল ২৪’ এবং প্রিন্ট মিডিয়া পার্টনার হিসেবে থাকছে ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’। দুইদিন ব্যাপী এই কনফারেন্সে বাংলাদেশসহ ১১ টি দেশ থেকে ২০০ জনের অধিক গবেষক অংশগ্রহণ করবেন এবং ৮৪ টি গবেষণাপত্র উপস্থাপিত হবে। অংশগ্রহণকারীদের উপস্থাপনা ও কাজের ভিত্তিতে সেরাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে। কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ হচ্ছে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, মালয়েশিয়া, স্পেন, ইন্ডিয়া, সৌদি আরব এবং দক্ষিণ কোরিয়া। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডীন, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ দেশ-বিদেশের শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর উক্ত বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত এটিই প্রথম কোন আন্তর্জাতিক কনফারেন্স।