ডুয়েটে দুইদিন ব্যাপী ‘নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিং, আইওটি অ্যান্ড মেশিন লার্নিং (এনসিআইএম ২০২৩)’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সম্পন্ন
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর-এ গতকাল শনিবার (১৭ জুন, ২০২৩ খ্রি.) সন্ধ্যায় দুইদিন ব্যাপী ‘নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিং, আইওটি অ্যান্ড মেশিন লার্নিং (এনসিআইএম ২০২৩)’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ -এর আয়োজনে ঢাকার একটি হোটেলে এ কনফারেন্সের সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কনফারেন্সের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, কর্মশক্তির দক্ষতা, জ্ঞান এবং মেধা যে কোনো জাতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের চালিকাশক্তি। বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এসব বিষয়ের উপর এমনভাবে প্রভাব ফেলে অগ্রসর হচ্ছে, যা ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান- এমনকি সমন্বিত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং সেই সঙ্গে নবায়নযোগ্য শক্তি বিন্যাসের মাত্রাও ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে মানবজাতির জীবনযাপন, কাজ এবং একে অপরের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা একটি নতুন মাত্রা দেখতে পাচ্ছি। ফলে আগামী কয়েক বছর অর্থনীতি এবং শিল্পসহ সকলক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। এজন্য উৎকর্ষতা সাধনের এই দ্বার প্রান্তে দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সাথে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। একইসাথে আমাদের নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর বেশি বেশি গবেষণা ও আলোচনায় সম্পৃক্ত করতে হবে। সেক্ষেত্রে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির পাশাপাশি সামাজিক বিজ্ঞানকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা, মানব জাতির টিকে থাকার অন্যতম চালিক শক্তি হলো নৈতিকতা ও মূল্যবোধ।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যে আদর্শ বা ব্রত নিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, সেই আদর্শ তথা সোনার বাংলা গড়ে তোলা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হতে হলে তাঁর আদর্শ ও দর্শনকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমার্ণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যেতে হবে। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সকলকে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণের আহবান জানান। এ সময় তিনি গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও তাঁদের পরিবারের শাহাদাত বরণকারী সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাসহ জাতীয় চার নেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি ১৯৫২ সালের সকল ভাষা শহীদ, মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং দুই লক্ষ নির্যাতিত নারীসহ মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া তিনি আয়োজক কমিটি, প্রতিনিধি, মূল বক্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এবং দেশ-বিদেশের অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি আরো বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, এ ধরণের আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে নতুন নতুন গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং জ্ঞান বিনিময়ের প্লাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এবং রূপকল্প ২০৪১ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন এগিয়ে যাওয়ার কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে- যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার পরিকল্পনা এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের হাত ধরে প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে অবদান রাখবে।
কনফারেন্সের পৃষ্ঠপোষক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রশীদ গবেষণা ও উদ্ভাবনে শিক্ষক-বিজ্ঞানীদের আরো উৎসাহী হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, আমি মনে করি ‘রূপকল্প ২০৪১’ অর্জনের লক্ষ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার্থী, গবেষক এবং শিক্ষাবিদদের মানসম্পন্ন গবেষণা সম্পাদনে সহায়তা ও উৎসাহিত করতে আয়োজিত এ কনফারেন্সে উত্থাপিত চিন্তা ভাবনাগুলো শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, গবেষক, নীতি-নির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে জ্ঞানের আদান-প্রদান এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেটওয়ার্ক তৈরিসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ।
সিএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও কনফারেন্সটির জেনারেল চেয়ার অধ্যাপক ড. মো. ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং অরগানাইজিং সেক্রেটারি ও সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন টেকনিক্যাল প্রোগ্রাম কমিটির চেয়ার অধ্যাপক ড. ফজলুল হাসান সিদ্দিকী। মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন কনফারেন্সের অরগানাইজিং চেয়ার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল কাশেম। এ সময় কনফারেন্সটিতে অংশগ্রহণকারীদের উপস্থাপনা ও কাজের ভিত্তিতে তিনটি ক্যাটাগরিতে সেরাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়।
‘রূপকল্প ২০৪১’ অর্জনের লক্ষ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার্থী, গবেষক এবং শিক্ষাবিদদের মানসম্পন্ন গবেষণা সম্পাদনে সহায়তা ও উৎসাহিত করতে আয়োজিত এ আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের স্পন্সর হিসেবে ছিল ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘর এবং এটুআই (ধ২র)। টেকনিক্যাল কো-স্পন্সর হিসেবে ছিল ‘আই-ইইই’ ও ‘আই-ইইই কম্পিউটার সোসাইটি’ এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট হিসেবে ছিল ‘আই-ইইই কম্পিউটার সোসাইটি বাংলাদেশ চ্যাপ্টার’। এছাড়াও ইলেকট্রনিক মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ‘চ্যানেল ২৪’ ও প্রিন্ট মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’। দুইদিন ব্যাপী এই কনফারেন্সে বাংলাদেশসহ ১১ টি দেশ থেকে ২০০ জনের অধিক গবেষক অংশগ্রহণ করেন এবং ৮৪ টি গবেষণাপত্র উপস্থাপিত হয়। কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ হচ্ছে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, মালয়েশিয়া, স্পেন, ইন্ডিয়া, সৌদি আরব এবং দক্ষিণ কোরিয়া। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডীন, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ দেশ-বিদেশের শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর উক্ত বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত এটিই প্রথম কোন আন্তর্জাতিক কনফারেন্স।