ডুয়েটে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর-এ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর ৪৮ তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল (৩০ আগস্ট, বুধবার) রাতে অনলাইন প্লাটফর্ম জুমের মাধ্যমে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক ও প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বরেণ্য কৃষিবিদ অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রশীদ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বরেণ্য কৃষিবিদ অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খোকা থেকে পর্যায়ক্রমে বঙ্গবন্ধুতে পরিণত হয়েছেন। তিনি দেশভাগের সময় থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, ’৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট, আইয়ুব খানের এক দশকের স্বৈরশাসন-বিরোধী আন্দোলন, ’৬২ ও ’৬৪-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ঐতিহাসিক ৬-দফা আন্দোলন, ’৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৬-দফাভিত্তিক ’৭০-এর নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয় ও ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে বাঙালি জাতিকে এনে দেন স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ। দেশ স্বাধীনের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়তে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট কাল রাতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে তার ব্যতয় ঘটে। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সকলক্ষেত্রে যুগান্তকারী সাফল্য এনে দিয়ে সোনার বাংলা গড়ার কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি যেমন বঙ্গবন্ধু, তেমনি আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশও বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নিপুণ দক্ষতা ও অদম্য নেতৃত্বের কারণেই আমরা পেয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আজকের এই বেদনা শুধু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয় বরং সমগ্র বাঙালি জাতির। এই শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্র নষ্ট করে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। এছাড়া তিনি সকলকে শিক্ষার্থীবান্ধব ও অগ্রাধিকারভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. হাবিবুর রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারকে হত্যা করে ইতিহাসের কলঙ্কিত বর্বরোচিত অধ্যায় রচিত হয়- যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। এরপর খুনিচক্র কেবল ব্যক্তি মুজিবকেই হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি, তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তির উপর আঘাত হানে। এ ঘৃণ্য হত্যাকান্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি, দেশবিরোধী চক্র বাংলার মাটি থেকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহযোগীদের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস ও দর্শন কখনোই মুছে ফেলা যায় না। দেশবাসী সকল ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। দেশবাসীর সহযোগিতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ক্ষুধা, দারিদ্র মুক্ত, তথ্য-প্রযুক্তি সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কাজ অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাই আমাদের উচিত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শনে দীক্ষিত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাওয়া।
উপাচার্য সবাইকে জাতীয় শত্রুদের বিরুদ্ধে সচেতন থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান। তিনি ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও তাঁদের পরিবারের শাহাদাত বরণকারী সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাসহ জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রশীদ ১৫ আগস্টে শহীদদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করে এই জঘন্যতম হত্যাকান্ডের ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানোর মাধ্যমে দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের একান্ত দায়িত্ব বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডীন, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক, প্রোভোস্ট, রেজিস্ট্রার (অ. দা.), শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।